মোদীর আক্রমণের ভিত মমতার নির্মাণ
সারা দেশ জুডে কষিজীবী সমাজের ঘোর দুর্দিনে ছাত্র শিক্ষক যুব সমাজ সহ শ্রমজীবী মানুষ মোদী সরকারের সমস্ত গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য পদদলিত করে কষিক্ষেত্র কষিপণ্য সংক্রান্ত বিল তিনটির বিরুদ্ধে পথে নেমেছে৷ আশ্চর্যের বিষয় গত ২৫ তারিখের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ রাজপথ অবরোধ আন্দোলন নিয়ে দেশের প্রধান প্রধান বৈদ্যুতিন মাধ্যম এবং সংবাদপত্রগুলির অধিকাংশ সেই সময় অদ্ভুতভাবে নীরব৷ এমনকি, অনেকে সরকারের এই আধিপত্যবাদী আগ্রাসী পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছে৷ বরঞ্চ সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা এবং বলিউডের ড্কাগচক্র ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে ভীষণই ব্যস্ত হয়ে পডছে৷ আর হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ত সরকারের তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রক আমলা পুলিশের যোগসাজসে দিল্লীর দাঙ্গা, কাশ্মীরের সন্ত্রাস ইত্যাদি নিয়ে প্রতিনিয়ত ষডযন্ত্র, তদন্ত সংবাদ নির্মাণের কাজ চলছে৷ উল্লেখ্য, সি এ এ, এন আর সি বিরোধী প্রতিবাদী আন্দোলন সর্বস্তরের সামাজিক আন্দোলনের প্রথম সারির নেতবন্দ কর্মীদের ‘দেশদ্রোহী’ চিহ্ণিত করা হচ্ছে৷
আসলে দেশে করোনা সংক্রমণ মত্যুর ভয়াবহতা, সার্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যর্থতা, অসহনীয় বেকারত্ব, দারিদ্র ইত্যাদি সমস্ত বিষয়গুলিকে অস্পষ্ট করে সংবাদ মাধ্যমের সহায়তায় এক চরম নেতিবাচক সামাজিক মনন নির্মাণই এদের লক্ষ্য৷ সামান্য কয়েকদিনের সংসদ অধিবেশনে যেভাবে লেবার কোড সংশোধন, কষি আইন ইত্যাদি জোর করে পাশ করিয়ে নিয়েছে তাতে মোদী সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্টতর হয়েছে৷
কৃষি সংক্রান্ত তিনটি বিল সম্বন্ধে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী রাজনৈতিক দল সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্য - এই বিলগুলি আইনে পরিণত হলে নাকি দেশের কষক সম্প্রদায় কষিকার্যে এবং কষিবাজারে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলবে! সংক্ষেপে বিল তিনটি৷ কষকের উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা বাণিজ্য (উন্নয়ন সার্থকতা)৷ প্বিতীয়টি, কষকের (ক্ষমতা নিরাপত্তা) মূল্য পরিষেবার চুক্তি৷ ততীয়টি, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধন বিল)৷ এই তিনটি বিল আইনে পরিণত হয়ার অর্থ এককথায় সমগ্র কষি ব্যবস্থাটাই অর্থাৎ কষিপণ্য উৎপাদন, সংগ্রহ, মজুতদারি, বন্টন, বিপণন সাজিয়ে গুছিয়ে কষি ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত হাঙ্গরসদশ পুঁজি মালিকদের মুখের সামনে সাজিয়ে দেয়া হল৷ গত তিন চার দশক ধরে কষি পণ্যের বিপণনের প্রসঙ্গে একদল সংগ্রহকারী ফডেদের শিক্ষণ্ডীরূপে খাডা করে, যেভাবে ভূমি সংস্্কার, জমি অধিগ্রহণ কষি বিপণনে নয়া উদারবাদী আগ্রাসন শুরু হয়েছে - তার কফিনের শেষ পেরেকটা মেরে দিল এই ফ্যাসিবাদী সরকার৷
প্রসঙ্গত এই কষিব্যবস্থা সহ খাদ্যবন্টন ব্যবস্থার ধবংসের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি যখন কষিজীবী সম্প্রদায়ের পক্ষে দাঁডিয়ে লডাই করে যাচ্ছে বঔদিন ধরে, তখন বঔরূপীর মতো রঙ বদলে তণমূল কংগ্রেস হঠাৎ করে তারস্বরে চিৎকার করছে৷ এই সব আঞ্চলিক ক্রোনী পুঁজিপতি লুম্পেন নির্ভর দলগুলি, এক কথায় কষিপণ্য বিপণন আইন ভূমি সংস্্কার আইনের সংশোধন করে মোদী সরকারের কাজটা যথেষ্ট এগিয়ে রেখেছিল৷ ঠিক বর্তমানে মোদীর মতোই গায়ের জোরে পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালে রাতারাতি বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশনের শেষদিনে সিলেক্ট কমিটিতে কম. সূর্যকান্ত মিশ্র, কম. সুভাষ নস্্কর, কম. প্রবোধ সিন্হা, কম. তরুণ নস্্কর প্রমুখের তীব্র আপত্তি সত্ত্বে প: ব: কষিপণ্য বিপণন (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী বিল ২০১৪ পাশ করিয়ে করিয়ে নেয় মমতার সরকার৷ সেই কষক বিরোধী সংশোধনী আইনে নামে মাত্র নিয়ন্ত্রণের বাহানা দিয়ে বাজেটে কষিপণ্যের বিপণন, রপ্তানি খুচরো বাজারে বঔজাতিকের দখলদারি, মান্ডিতে বা মান্ডির বাইরে বিপণন সমস্ত কিছুই কষি বাণিজ্যের দানবীয় ব্যবসায়ীদের হাতে ছেডে দেয়া হয়েছে৷
আজ সেই মমতাশাসিত পশ্চিমবঙ্গই যেন মোদীকে পথ দেখাচ্ছে৷ অথচ প্রতিটি ক্ষেত্রে মিথ্যে চাপা দেয়ার জন্য যেভাবে অতিনাটকীয় পরিস্থিতি তৈরী করে তণমূল কংগ্রেস সেই প্রহসনেরই পুনরাভিনয় শুরু হয়েছে৷ কারণ, মমতা-মোদী প্রত্যেকেই শিক্ষাগুরু আর কেউ নয় গোয়েবব্লস হিটলার৷ এই দুই পুঙ্গবকেই অবশ্য একদিনের ব্যবধানে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল৷