৬৮ বর্ষ উনিশ সংখ্যা | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
সংবাদ
প্রতিবাদে প্রতিরোধে উত্তাল ভারত
কর্পোরেট স্বার্থে মোদী সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামূহিক সর্বনাশে উদ্যত
দেশের অগনন কষিজীবীর জীবন উৎসন্নে পাঠানোর মোদী-চক্রান্তকে পরাভূত করতে সারা দেশ বিক্ষোভে উত্তাল৷ ২৫ সেপ্ঢেম্বর সকাল থেকেই সর্বত্র শ্রমিক-কষক-ছাত্র-যুব-মহিলা এবং অন্যান্য সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে চরম ঘণা ক্ষোভের প্রকাশ অভূতপূর্ব আকারে বিস্ফারিত হল৷ চাল-ডাল-আটা- ভোজ্য তেল-আলু-পিঁয়াজের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য সামগ্রীর ব্যবসায় কালোবাজারি মজুতদারির নির্বাধ সুযোগ করে দেয়া মোদী সরকারকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আর মেনে নিতে প্রস্তুত নয়৷ দিল্লির রাজপথে হাজার হাজার শ্রমিক কষক বিক্ষোভে সোচ্চার হলেন৷ গত বছরে যে ৪২ হাজার কষকের আত্মহত্যা হয়েছে তা, আর অনেক বেডে যাবে বলেই সকলের সংশয়৷
দেশের জনস্বার্থবিরোধী মোদী সরকার জাতীয় বিজাতীয় ধনকুবেরদের স্বার্থে বর্তমান করোনা অতিমারির অনৈতিক সুযোগ নিয়ে পার্লিয়ামেন্ট-এ তিনটি চরমভাবে কষক বিরোধী আইন জোর করে পাশ করিয়ে নিল৷ এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের মনোভাব সম্পর্কে কোন সংশয় কোনকালেই ছিল না৷ কিন্তু গত ২০ সেপ্ঢেম্বর রাজ্যসভায় সরাসরি টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে, বঔসংখ্যক মার্শাল বা পালোয়ানকে দিয়ে রাজ্যসভায় বিরোধী পক্ষের সাংসদদের বস্তুত গায়ের জোরে আটকে রেখে অত্যন্ত বিরূপ প্রভাবযুক্ত বিলগুলি ধব্িনভোটে গহীত হল বলে ঘোষণা করলেন সভার ডেপুটি চেয়ারম্যান৷The Farmer’s Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation Bill 2020, The Farmers (Empowerment and Protection) Agreement and Price Assurance and Farm Services Bill 2020 এবংEssential Commodities (Amendment) Bill 2020-র মতো বিশেষভাবে কষক সাধারণ মানুষের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ্ করার আইনে মান্যতা দেয়া হল৷ ভয়ঙ্করভাবেই স্বৈরশাসনের স্বরূপ ভারতের সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে পারলেন৷ এমন সাংঘাতিক ঘটনা অতীতে কোনদিনই হয়নি৷ অভাবিতপূর্ব৷
স্থিতবুদ্ধির কোন মানুষই ভাবতে পারবেন না যে, ১৯৫৫ সালে যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন তৈরী হয়েছিল তা, হঠাৎ বানচাল করা হল কেন? দীর্ঘ প্রায় সাডে ছয় দশক এই আইনের বলে খাদ্য সামগ্রীর মজুতদারি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হয়েছে৷ দেশের দরিদ্র লোক সাধারণের ক্ষুধার অন্ন সংস্থানে এই আইনের বিশেষ উপযোগিতা বারংবার লক্ষ করা গেছে৷ বিশ্ব ক্ষুধার মানচিত্রে ভারতের অবস্থান এখন অতি লজ্জাজনক স্থানে৷ আইনের বাস্তব প্রয়োগ ক্ষেত্রে গাফিলতি ছিল অবশ্যই৷ মোদী সরকার সেই গাফিলতির সীমাহীন বিস্তার সম্ভব করতে আইনটিই বস্তুত তুলে দিল৷
এ সবের যথাযথ বিশ্লেষণ করতে সঠিকভাবে কারণ অনুসন্ধান অত্যন্ত জরুরি৷ ভারতে বিজেপি’র অপশাসন, মোদীর উত্থান, ফ্যাসিবাদী অপশাসন নৈতিকতা বর্জিত কর্মসূচি একের পর এক লাগু করার প্রসঙ্গগুলি সবাইকেই বুঝতে হবে৷ মনে রাখতে হবে বর্তমান প্যান্ডেমিক বা অতিমারি চলাকালীন মানুষ আত্মরক্ষায় শঙ্কিত দিবানিশি যাপনে যখন বাধ্য হচ্ছেন সেইসময়, মোদী সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতের সাধারণ মানুষদের সর্বনাশ সাধন করার অপকর্ম বেপরোয়া হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে৷ এবারের সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আঔত সংসদে যে অর্ডিনান্সগুলি গত জুন মোদী সরকার জারি করেছিল, সেগুলিকে সংখ্যার জোরে এবং বঔক্ষেত্রে গায়ের জোরে আইনে পরিণত করা হল৷
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি তার সহযোগী দলগুলি লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে৷ নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার অনেক আগেই বিজেপি’র অন্দরমহলে এবং বহত্তর সংঘপরিবারের নেতত্বের মধ্যে এক ধরনের প্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল বলে শোনা যায়৷ প্রসঙ্গটির সত্য মিথ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়৷
এইসব ক্ষেত্রে কিছুটা শোনা কথা বা জনশ্রুতির পরেই নির্ভর করতে হয়৷ গুজরাত গণহত্যার নায়ক নরেন্দ্র মোদী যে আর এস এস-এর বিশেষ পছন্দের ব্যক্তি, তা জানাই ছিল৷ উগ্র হিন্দুত্ববাদী হিংস্র অবস্থান নিয়ে সমগ্র দেশে সংঘ পরিবারের প্রভাব এবং কর্তত্ব বঔ পরিমাণে বদ্ধি করার ক্ষেত্রে মোদী সহায়ক হতে পারে বলে সংঘ পরিবারের বেশির ভাগ প্রভাবশালীরা মনে করেছিলেন৷ এর মধ্যে যে আর অনেক প্রসঙ্গ ঠে নি, তা হতে পারে না৷
প্রবীণ নেতা এবং ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে বিজেপিকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে যাঁর উদ্যোগ, ষডযন্ত্র এবং কর্মকুশলতা এক পর্যায়ে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সেই ব্যক্তিটি অবশ্যই দেশের প্রধানমন্ত্রীত্বর অন্যতম দাবিদার ছিলেন৷ সংসদীয় কর্মকান্ডে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং এর আগে অটলবিহারি বাজপেয়ির সরকারে দু নম্বর শীর্ষ কর্তা থাকার কারণে তিনি নিশ্চয়ই কোন এক সময় প্রায় সর্বসম্মত প্রার্থী বলে পরিগণিত হচ্ছিলেন৷ অন্য আর একজন এলাহাবাদের নামী অধ্যাপক, পদার্থবিদ্যায় উচ্চশিক্ষিত, সংসদীয় ব্যবস্থায় অভিজ্ঞ এবং রাজধানীর উচ্চকোটি মানুষদের মধ্যে বিশেষ পরিচিত মানুষটি যে শীর্ষপদের দাবিদার হবেন, তা বলাই বাঔল্য৷ এদের মধ্যেই সম্ভবত তীব্র প্রতিপ্বন্দ্বিতা হতে পারতো৷
কিন্তু সাধারণ নির্বাচনের প্রচারকার্যেই গুজরাত প্রদেশের অভাবনীয় উন্নয়নের সম্পূর্ণ মিথ্যা কাহিনী নির্মাণ করে মোদী আসরে নেমে পডেছিলেন৷ অর্থাৎ আসমুদ্র হিমাচল জুডে যে অসংখ্য নির্বাচনী সভা মোদী কেন্দ্রিক হয়ে উঠতে পেরেছিল তার আগেই নিশ্চিত করা হয়েছিল মোদীই হবেন সেই ব্যক্তি৷ নিঃসংশয় হবার পরেই ভারতের বিপুল ধনরাশির মালিক বা ধনকুবেরকুল তাদের সমস্ত সামর্থ্য উজাড করে মোদীর পিছনে দাঁডিয়েছিল৷ এইসব কর্পোরেট কোম্পানি যে উডোজাহাজ মোদীর দৈনন্দিন ব্যবহারে উৎসর্গ করেছিল তা কী কোন প্রত্যাশা ছাডাই! এমন তো হতেই পারে না৷ বিশেষ করে আম্বানি, আদানি প্রমুখ গুজরাতি ব্যবসায়ীদের উত্থানের ইতিহাস অনেক পুরনো না হবার ফলে তথ্যাভিজ্ঞ মহলে প্রায় সকলেই স্বীকার করেন যে নানা সময়ে কেন্দ্রীয় বা বঔ রাজ্য সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের তুষ্ট করে এবং নানাবিধ আইনের ফাঁক গলে গিয়েই বর্তমান বিপুল ধনরাশি এইসব পুঁজিপতিদের কুক্ষিগত হয়েছে৷
অন্ততপক্ষে বিগত শতাব্দীর সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই এক অতি সাধারণ কারণিকের চাকুরি করা ধীরুভাই আম্বানি ব্যবসা শুরু করেন৷ কোন চমকপ্রদ প্রতিভা তাঁর ছিল না৷ তিনি কতবিদ্য মানুষ ছিলেন না বলেই সকলে জানেন৷ তাঁর পূর্ব প্রজন্মের কেউ বিশাল ধনসম্পত্তি রোজগার করে তাঁর নামে উৎসর্গ করেছিলেন বলে জানা নেই৷ কিন্তু রিলায়েন্স-এর স্থপতি প্রায় শূন্য থেকেই রত্ন সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন কারণ, দিল্লির রাজদরবারে কিভাবে, কার কাছে, কোন মুহূর্ত কুর্ণিশ করতে হয় তা তিনি শিখেছিলেন৷ সেভাবেই তিনি অতিসাধারণ অবস্থা থেকে ধনাঢ্য শুধু নয়, ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট ধনকুবের নামে জীবদ্দশাতেই পরিচিতি লাভ করেন৷
দিল্লির ক্ষমতা-মন্দিরে প্রবেশের অধিকার অর্জন করতে বেশ ভাল পরিমাণ কাঠখড পোডাতে হয়৷ সেসবের বিস্তারিত বিবরণ জানা যায় না এবং উল্লেখ করা সম্ভব নয়৷ আর ১৯৭৪-৭৫ সালে প্রবল প্রতাপান্বিতা ইন্দিরা গান্ধি তখন ভারতেশ্বরী৷ তাঁর অঙ্গুলি হেলনে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খায়৷ তাঁর ঘনিষ্ঠ সকলেই প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী৷ লাইসেন্স-রাজ তখন প্রবল বিক্রমে চালু৷ যে কোন শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী দিল্লির ক্ষমতা অলিন্দে সবিশেষ আকর্ষণীয় নজরানা দিয়েই প্রবেশাধিকার পেত৷
শোনা কথা, প্রমাণ সংগ্রহ করা আদৌ সম্ভব নয়, রিলায়েন্স এর প্রতিষ্ঠাতা নাকি অনায়াসে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছে যেতে পারতেন এবং প্রয়োজনীয় কাজ উদ্ধার করে নির্বিঘ্নে রাজধানী থেকে ফিরতেন৷ অন্যান্য অনেক ধনকুবেরদের কনুই-ধাক্কা মেরে রিলায়েন্স উল্্কা বেগে সম্পদ আহরণে অগ্রসর হয়৷ এমন উত্থান অবশ্যই চমকপ্রদ৷ ভারতের অর্থনৈতিক প্রসার ক্ষেত্রে এই কোম্পানিটির কোন বনেদী পরিচয় ছিল না৷ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এদের পূর্বজরা আদৌ যুক্ত ছিলেন না৷ কিন্তু তাঁবেদার পুঁজিপতি হিসেবে এরা যে ঝটিতি মধ্য আকাশে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে শুরু করেছিল তা একান্তভাবেই দিল্লিশ্বরীর অকুণ্ঠ কপায়৷ কত পরিমাণ অর্থ ব্যায়িত হয়েছিল বা কোথায় কার কাছে অন্য কী নজরানা পৌঁছে দিতে হয়েছিল সেসব অবশ্যই জানা সম্ভব নয়৷ বর্তমানে তাঁর দুই সুযোগ্য পুত্র মুকেশ অনিল তাদের পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বিশ্বের প্রথম দশজন সর্বাধিক সম্পত্তির মালিক বলে স্বীকতি পেয়েছেন৷ শুধু মুকেশ আম্বানিই বঔ সহস্র কোটি টাকা অকাতরে খরচ করে ‘্যান্টিলা’ নামে এক বঔতল প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন৷ তাঁর স্ত্রীর জন্মদিনে তিনি একটি উডোজাহাজ উপহার দিতে পারেন৷ মুম্বাই শহরের অতি অভিজাত পল্লীতে তাঁর নিজস্ব প্রাসাদে উডোজাহাজ, হেলিকপ্ঢার প্রভতি ঠানামা করতে পারে৷
বিত্তবৈভবের সার্থকতা তার প্রকাশে৷ সেই উদ্ধত প্রকাশ মুকেশ আম্বানি সর্বসমক্ষে করে যাচ্ছেন৷ বিশ্বদুনিয়া জানে যে, বর্তমান ভারতের সর্বোচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিটির জীবনচর্যা বিশ্বের অন্য বঔ প্রাগ্রসর ধনকুবেরকে সম্ভবত ঈর্ষন্বিত করে৷ গৌতম আদনির ‘ফরচুন’ কোম্পানির উত্থান সম্পর্কে নানা আখ্যান আছে৷ কষিপণ্যসহ বঔমুখী বা বঔবিস্তৃত ব্যবসার মাধ্যমে আদানিরা নাকি আম্বানিদের সমগোত্রীয় হয়ে উঠছে৷ এদের রমরমা শুরু নয়া উদারবাদী ব্যবস্থায়৷ মুক্ত বাজারের অকপণ দাক্ষিণ্যে নাকি এরা অপরিমেয় সম্পত্তি একত্র করেছে৷
গুজরাতের শাসন ক্ষমতার শীর্ষে মোদী যুগ শুরু হয় গত ২০০১ সালে৷ তিনি নাকি আর এস এস-এর কাছ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারলে তিনি হিন্দু রাষ্ট্র গডে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষার নিশ্চিত সুযোগ অবারিত করবেন৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত গুজরাতি বা বোরা সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের ‘সবক’ শেখাতেন এবং তারা যেন একান্তভাবে প্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার পথটি বেছে নিতে বাধ্য হন, সেই ব্যবস্থা তিনি করবেন৷ আর এস এস অতি হিংস্র শীর্ষ নেতত্ব নাকি সেই উদ্দেশ্যেই গুজরাতেই প্রবীণ নেতা কেশুভাই প্যাটেলকে পদত্যাগে বাধ্য করে নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যের প্রধান হিসেবে গ্রহণ করে৷ অতি দক্ষতার সঙ্গে আর এস এস-এর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যক্তিটি হাতে কলমে করে দেখান যে, হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণের প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক প্রয়োজন বঔসংখ্যক নির্মম হত্যা৷ লুঠতরাজ দাঙ্গা, নারীধর্ষণ নির্বিচারে করতে না পারলে ‘হিন্দু অস্মিতা’ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়৷ অত্যাচারের চরম পর্যায় স্পর্শ করে যেমন ১৯২২-২৩ থেকে ইতালির ফাসিস্ত শাসক মুসোলিনি প্রায় ২২ বছর রাজত্ব করছেন বা হিটলার ১৯৩৩ থেকে আত্মহত্যার ১৯৪৫-এর ৩০ এপ্রিল পূর্ব পর্যন্ত সেই পথই অতি নিবিষ্ট চিত্তে মোদী অমিত শাহ প্রভতি অনুসরণ করেছিলেন৷ সংঘ পরিবারে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা এসবের ফলে বিশেষ বদ্ধি পায়৷
দেশের সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অতি কুশলী রাজনীতিক অটলবিহারি বাজপেয়ি লোক ভোলানোর জন্য ভাষণে বলেছিলেন গুজরাত দাঙ্গা জাতির ইতিহাসে বা জাতির কপালে এক কলঙ্ক বিশেষ৷ তিনি প্রকাশ্যেই মোদীকে রাজধর্ম পালনের উপদেশ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু এমন এক কলঙ্ক লেপনের অপরাধে নরেন্দ্র মোদীকে সরকারি বা প্রশাসনিক ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেননি৷ তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লালকষ্ণ আদবানি মুখ বুজেই ছিলেন৷ একবারের জন্য গুজরাতে রাষ্ট্রপতি শাসন কায়েম করার প্রসঙ্গ উল্লেখ পর্যন্ত করেননি৷
মোদী দাঙ্গা করে বঔসংখ্যক অসহায় মানুষের রক্ত ঝরিয়ে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসের বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন৷ গুজরাতের কোন সংখ্যালঘু মানুষ কেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মানুষের হিম্মত হয়নি ই কাপালিক, তন্ত্রসাধকের মতো উদ্ধত আচরণের বিরোধিতা করার৷ মোদী অনায়াসে জিতেছিলেন এবং অভিনন্দিত হয়েছিলেন৷ লজ্জার হলে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সেই সময় পুষ্পস্তবক পাঠিয়েছিলেন৷ তিনি তখন বাজপেয়ী মন্ত্রীসভার সদস্যা৷
মনে পডে, জনৈকা গীতা শ্রীবাস্তব নাম্নী এক যুবতীর অপরাধ ছিল তিনি এক মুসলিমকে প্রণয়বশত স্বামী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন৷ সন্তানসম্ভবা এই কন্যাটিকে আহমেদাবাদের রাজপথে প্রকাশ্যে ত্রিশূল দিয়ে পেট ফুটো করে প্রায় ভ্রূণাবস্থায় তাঁর সন্তানকে নির্দয়ভাবে খুঁচিয়ে খঁুচিয়ে হত্যা করেছিল উন্মত্ত দাঙ্গাবাজের দঙ্গল৷ মেয়েটি যে নিহত হয়েছিলেন, রাজপথ তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল, সেসব বিবরণ প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা গেছিল৷ টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রায় পাতা জুডে সেসব প্রকাশিত হয়েছিল৷
মোদী পাকাপাকিভাবে ক্ষমতায় আরোহণ করেই গুজরাত রাজ্যে পুঁজি মালিকদের অবাধে শ্রম প্রাকতিক সম্পদ লুণ্ঠনের ব্যবস্থা করেই স্বৈরতান্ত্রিক পথে চলে আম্বানি-আদানি প্রমুখর আস্থাভাজন হয়েছিলেন৷ এখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে একই পথে চলে দেশের সাধারণ জনজীবনকে বিধব্স্ত করে চলেছেন৷ তিনি এখন আম্বানির জি ফুড মার্ট কিংবা আদানির ‘ফরচুন’ যাতে আর মুনাফা সংগ্রহ করতে পারে, সেজন্য দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করতে উদ্যত৷ সেই কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ মোদীর অপসারণ আন্দোলনে একনিষ্ঠ ভাবে উদ্যত৷ মানুষের জয়, আজ নয় কাল হবেই৷