৬৮ বর্ষ উনিশ সংখ্যা | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

    সংবাদ

    ঐক্যবদ্ধ বাম সহযোগী দলগুলির প্রস্তাবনা


    সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নদী ভাঙন এবং বন্যায় হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন৷ বিশেষ করে মালদহ-মুর্শিদাবাদে নদী ভাঙনের ফলে কয়েকটি গ্রাম নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছে৷ উত্তরবঙ্গের জলপাইগুডি, আলিপুরদুয়ার-সহ অন্যত্র বন্যায় মানুষকে দুর্দশার মধ্যে পডতে হয়েছে৷ এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বেডেছে৷ বিদ্যুতের মাসুল অস্বাভাবিক বেডেছে৷ সরকারী মদতে গণপরিবহন ব্যবস্থা কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন, লাগামছাডা৷ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ্যাম্বুলেন্সের ভাডা অস্বাভাবিকভাবে নেয়া হচ্ছে৷ অথচ সরকার এ-ব্যাপারে যথারীতি নির্বিকার৷

    এছাডা রেল, কয়লা, প্রতিরক্ষা-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির নির্বিচার বা বেপরোয়া বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত৷ ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন, রান্নার গ্যাস ইত্যাদির দাম কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পিতভাবে বাডিয়ে দিয়েছে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার তার দায় দায়িত্ব এডিয়ে চলছে৷ অতিমারিকে সামনে রেখে যে যার মতো করে খা, দেশের পুঁজিপতিরা আর প্রচুর মুনাফা করুক - এই ধরনের দিশাই দেখাচ্ছে রাজ্য সরকার৷ একটা অভূতপূর্ব নৈরাজ্য বা ডামাডোলের পরিস্থিতির মধ্যে আমরা রয়েছি৷

    রাজ্যের নদী ভাঙনের বিষয়টি কেবলমাত্র রাজ্য সরকারের বিষয় নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাই বেশি৷ কিন্তু রাজ্য সরকার তার দায় পুরোপুরি এডিয়ে যেতে পারে না৷ নদী বাঁধ নির্মাণ বা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁডানোর বদলে শাসকদলের নানাস্তরের নেতাদের টাকা লুটই প্রধান কাজ হয়ে দাঁডিয়েছে৷ নদী ভাঙনের সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্র রাজ্য সরকারের মধ্যে অতীতে যেসব চুক্তি হয়েছিল সেগুলি অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য আমাদের দাবি তুলতে হবে৷ সাধারণ মানুষ এভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হতে পারেন না৷ এ মেনে নেয়া যায় না৷

    জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক ভাবে বেডে যায়া দাম কমানোর ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর তথাকথিত টাস্্ক ফোর্সের ঘোষণা নিতান্ত প্রহসনে পরিণত হয়েছে৷ বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মাসুল বদ্ধির বিরুদ্ধে রাজ্যব্যাপী গণবিক্ষোভের পরে সরকার নিশ্চুপ৷ গণপরিবহনের মালিকরা সরকারী মদতে যে যার মতো ভাডা নিয়ে চলেছে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাসের ভাডা প্রায় প্বিগুণ হয়ে গেছে৷ অথচ সরকার দাবি করছে বাসের ভাডা বাডেনি৷ বামপন্থী সহযোগী দলগুলির পক্ষ থেকে পেট্রোপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে জ্বালানির উপর কর ছাড-সহ আরো কিছুটা সেস রদের দাবি জানানো হয়েছিল৷ রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘব করার বদলে বাডিয়েই চলেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে তাদের খেয়ালখুশি মতো কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার শাসকদল যথারীতি নিশ্চুপ৷ তাঁদের কোন প্রতিবাদী বক্তব্য কখনোই শোনা যায় না৷

    অন্যদিকে রাজ্যে আত্মহত্যা বেডেছে৷ বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রা নির্বাহ করা সম্ভব নয় মনে করে আবার সপরিবারে আত্মহত্যার মতন ঘটনা ঘটেছে৷ কয়েকদিনের মধ্যে জলপাইগুডির রাজগঞ্জের দুই আদিবাসী কিশোরীর গণধর্ষণের ঘটনাকে ১৬টি দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসন যথারীতি হয় নিশ্চুপ অথবা ধর্ষকদের পক্ষে৷ সুদূর ২০১২ ফেব্রুয়ারি থেকে যে ট্র্যাডিশন মুখ্যমন্ত্রী অনুসরণ করছেন তা রাজ্যের সমস্ত বয়সের নারীদের পক্ষে অস্বাভাবিক যন্ত্রণাদায়ক৷ অবমাননার শেষ নেই৷

    বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং ভায়োরোলজিস্ট ড. পার্থসারথি রায়কে এন আই এ ্যাক্ট প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে বিনা বিচারে আটকের চক্রান্ত করেছে তার তীব্র নিন্দা করছে ১৬টি বামপন্থী সহযোগী দলসমূহ৷ ড. পার্থসারথি রায় করোনার আতঙ্ক থেকে মানুষকে মুক্ত করতে যে বিজ্ঞানসম্মত পথে চলা উচিত, সেই কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন৷ তিনি অবশ্যই সর্বদা মানুষের স্বার্থে কর্মরত৷

    রাজ্যে বামপন্থী অন্যান্যরা এই লকডাউন সময়কালে মানুষের পাশে দাঁডিয়েছেন৷ রাজ্যে বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান৷ মুখ্যমন্ত্রী যথারীতি মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন৷ এখন আবার ব্যাপক হারে চাকুরিরত মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছেন৷ সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে উঠেছে৷ তাই, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে বারে বারে রাস্তায় বামপন্থীদের নামতে হবে, আন্দোলনে শামিল হতে হবে৷ স্থানীয়ভাবে আদায়যোগ্য দাবি-দাওয়া প্রচারে যুক্ত করতে হবে৷